সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ একটি গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি। বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়া সাধারণ মানুষের দুর্দশার গল্প নতুন কিছু নয়। কিন্তু দুর্নীতির এই চক্রটি এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, যেখানে সাধারণ জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী, প্রভাবশালী দালালের সাথে মিলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নিচ্ছেন। বিশেষ করে সেচ ও মৎস্য প্রকল্পের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের খুঁটি স্থাপন এবং মিটার দেওয়ার প্রক্রিয়ায় নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এই দুর্নীতি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই করছে না, বরং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিরও সৃষ্টি করছে। রুদ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. সোহাগ হোসেনের মতো ভুক্তভোগীরা এ দুর্নীতির শিকার। তার গ্রামের খুঁটিতে তারগুলো এতটাই নিচু যে, মাঝে মধ্যেই আগুনের ফুলকি ছিটকে পড়ে, যা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অথচ, এসব সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আরও ভয়াবহ। ভুক্তভোগীদের দাবি, তার যোগসাজশে দুর্নীতি এতটাই গভীরে প্রোথিত হয়েছে যে, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার স্বপ্ন আজ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা জরুরি। দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে দুর্নীতির এই চক্র ভাঙা অসম্ভব হয়ে পড়বে। বিদ্যুৎ সংযোগের মতো একটি মৌলিক সেবার ক্ষেত্রে দুর্নীতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে সংশ্লিষ্টদের অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।
অতএব, জনগণের স্বার্থে এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি। সমাজের প্রতি আমাদের দায়িত্ব এবং বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের নৈতিকতার প্রতিফলনই কেবল এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে পারে।
লেখক: সংবাদকর্মী।