গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’। প্রতিবছর ২৫ জুলাই আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশের প্রস্তাবেই ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ’ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। অথচ বাংলাদেশেই পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, গত সাড়ে তিন বছরে দেশে পানিতে ডুবে তিন হাজার ৮০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮৮.৫১ শতাংশ বা তিন হাজার ৩৬৮ জনই শিশু। বাস্তবে শিশুমৃত্যুর হার আরো বেশি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। পানিতে ডুবে মারা যাওয়া শিশুদের বেশির ভাগের বয়স পাঁচ বছরের কম। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কমিউনিটি বেইসড ইন্টিগ্রেটেড সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার, প্রটেকশন অ্যান্ড সুইম-সেইফ ফ্যাসিলিটিজ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদিত হয়। শিশু একাডেমির তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি দেশের ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। এসব পরিচালনা করবে বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তিন বছরমেয়াদি প্রকল্পটির দেড় বছর চলছে, নেই উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি। এই প্রকল্পের আওতায় এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী দুই লাখ শিশুর জন্য প্রকল্প এলাকায় আট হাজার সমাজভিত্তিক শিশু যত্ন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন বছরমেয়াদি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যার ৮০ শতাংশ বহন করবে বাংলাদেশ সরকার, ২০ শতাংশ বহন করবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিজ ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়াল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশন। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে পরীক্ষিত দুটি কৌশলের একটি হচ্ছে সমাজভিত্তিক শিশু যত্ন কেন্দ্র স্থাপন, আরেকটি হচ্ছে শিশুদের সাঁতার শেখানো। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কমিউনিটি ডে কেয়ার ও সাঁতার শেখানোর মডেলটি টেকসই করা দরকার। ডে কেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু ৮৮ শতাংশ কমানো সম্ভব। সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে এটাই হবে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে প্রধান কৌশল। পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সব পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে।